প্রকাশের সময়: বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫, ১১:৪৬ এএম প্রিন্টের তারিখ: বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২

বাংলাদেশে গণছাঁটাইয়ে নির্দয় এইচএসবিসি

বাংলাদেশে গণছাঁটাইয়ে নির্দয় এইচএসবিসি
ডেস্ক রিপোর্ট।।

ডেস্ক রিপোর্ট।।

বাংলাদেশে গণছাঁটাইয়ে নিজের গড়া রেওয়াজ পালন করছে না বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি। অতীতে ছাঁঁটাই কর্মীদের ৬০ মাসের বেতন দেওয়া হলেও এবার নতুন ফর্মুলা সামনে আনা হয়েছে। এতে অনেক কর্মীকে ঘরে ফিরতে হবে শূন্য হাতে।

নতুন নিয়মে বলা হয়েছে যার চাকরির বয়স যত বছর হয়েছে, তিনি ঠিক তত মাসের বেতন পাবেন। অথচ ২০১৩ সালে ছাটাই করা ১০০ কর্মীকে ৫০ মাসের সমান, অন্যান্য সময়ে ছাঁটাই করা কর্মীদের ৪১ মাসের বেতন দিয়ে বিদায় করা হয়। অন্যদিকে ২০২২ সালে শ্রীলংকাতে ছাটাইয়ের শিকার কর্মীদের ৬০ মাসের বেতন দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে গণছাটাইয়ের শিকার কর্মীদের প্রতি খুবই অবিচার করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ছাটাইয়ের শিকার কর্মীরা।

তারা বলেছেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি কান্ট্রি (বাংলাদেশ) সিইও মোঃ মাহবুব উর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য, কথা বলার জন্য সময় চাইলেও সাড়া দেননি। বলা হয়েছে সময় পেলে জানাবে, পনেরো দিন হয়ে গেলো সাক্ষাৎ দেননি। কোন রকম পেশাদারিত্ব দেখাননি, খুবই আপত্তিকর আচরণ করেছেন। আমাদের সঙ্গে নির্দয় ব্যবহার করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, ২০১৩ সালে যখন ১০০ জনকে ছাটাই করা হয়, তখন বিকল্প দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, চাকরি ছাড়লে ৫০ মাসের বেতন দেওয়া হবে, অথবা অন্য বিভাগে যোগদান করতে পারবেন। এবার কোন বিকল্প রাখা হয়নি। আবার সুবিধার জায়গাও সংকুচিত করা হয়েছে।

একদিনে প্রায় ৩ শতাধিক কর্মীকে ছাঁটাইয়ের নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৩১ মার্চ হবে তাদের শেষ কর্মদিবস। টানা চব্বিশ বছর সেবা দিয়ে জীবনের শেষ প্রান্তে চলে আসা কর্মীরাও বাদ যাননি ওই তালিকা থেকে। আকস্মিক ওই খবরে অনেকেই হতভম্ব হয়ে পড়েছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় তাদের নির্ঘুম রাত কাটছে।

সবচেয়ে বেশি বিপদে রয়েছেন স্যালারি ঋণগ্রহীতা কর্মীরা। ঋণের টাকা সমন্বয় করে যেতে বলা হয়েছে। যারা আবাসন ও কার লোন নিয়েছেন এককালীন অর্থ জমা দিতে হিমশিম খেতে হবে। ব্যাংক থেকে যে টাকা পাবেন তাতে তাদের ঋণ পরিশোধ হবে না। অনেক ক্ষেত্রে বাড়ি থেকে এনে ঋণ পরিশোধ করতে হবে, যা অনেকের পক্ষেই অসম্ভব।

আবার ঘটা করে বাংলাদেশে খুচরা (রিটেইল) ব্যাংকিং সেবা বন্ধের ঘোষণাও বুমেরাং হয়েছে কর্মীদের জন্য। আগে যারা চাকরির অফার নিয়ে ঘুরতো পেছনে তারাও এখন কম স্যালারির অফার দিতে চাচ্ছেন। আবার অনেকে এড়িয়ে চলছেন।

চাকরি হারানোর নোটিশ পাওয়া কর্মীরা ক্ষোভে ফুসছেন। তারা কান্ট্রি সিইও সাড়া না পেয়ে দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) গ্রুপ সিইও বরাবরে মেইল করেছেন। ২৭৭ জন কর্মী স্বাক্ষর সম্বলিত ওই আবেদনে অতীতের নজির অনুযায়ী প্রাপ্য চেয়েছেন।

আবেদনে স্বাক্ষর করা এক কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে বলেছেন,আমাদের ক্ষেত্রে তাদের বেশি উদার হওয়ার কথা ছিল। কারণ এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এখন চাকরি পাওয়া খুবই কঠিন হবে। ব্যাংক বন্ধের নোটিশের আগে যদি আমাদেক চাকরি খোঁজার কথা বলতো তখন হয়তো এমন বিপদে পড়তাম না।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক এইচএসবিসি ১৯৯৬ সালে ঢাকায় প্রথম শাখা চালু করে। বর্তমানে ঢাকায় ৪টি, বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ২টিসহ সারা দেশে সাতটি শাখা-উপশাখা এবং ১১ টি এটিএম বুথ রয়েছে। এছাড়া পাঁচটি ‘সিলেকট’ সেন্টারের মাধ্যমে বিশেষ ব্যাংকিং সেবা দিয়ে আসছিল। এসব শাখার হিসাবধারীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের আমানত সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। খুচরা ব্যাংকিং সেবার মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত হিসাব, গাড়ির ঋণ, বাড়ি কেনার ঋণ, বীমাসেবা, মেয়াদি বিনিয়োগ, ব্যক্তিগত অর্থায়ন। এর মধ্যে প্রচলিত ও শরিয়াহ দুই ধরনের সেবা রয়েছে। এসব সেবায় এখন নতুন গ্রাহক যুক্ত করা বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংকটি।

রিটেইল ব্যাংকিং সেবা বন্ধ হওয়ায় সাধারণ আমানতকারিরা কিছুটা হয়রানির শিকার হবেন। তবে বড় বিড়ম্বনায় পড়বেন ঋণ গ্রহীতা এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া শিক্ষার্থীরা। কারণ তাদের বেশকিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে স্টুডেন্ট ফাইল খুলতে হয়, এখন মাঝ পথে এসে অন্য কোন ব্যাংকে স্থানান্তর করা অনেক জটিল এবং বিড়ম্বনা তৈরি করবে। আদৌ এটা বাস্তবসম্মত কি-না তা নিয়ে সন্দেহের কথা জানিয়েছেন অনেকে।

বহুজাতিক ব্যাংক ও আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এইচএসবিসি মহামারী করোনার সময়ে থেকে নানা রকম বিতর্কের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে। করোনা পরবর্তী ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে একসঙ্গে ১১৪টি শাখার বন্ধ করে দেয়। এতে অনেক কর্মী বেকার হয়ে পড়েন। আবার ব্যাংকটির বাংলাদেশের শাখার মাধ্যমে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ উঠেছিল এক সময়।

বক্তব্যের জন্য বার্তা২৪.কম এর পক্ষ থেকে মেইল করা হয়। ফিরতি মেইলে এইচএসবিসি বাংলাদেশের (হেড অব কমিউনিকেশন) তালুকদার নোমান আনোয়ার জানিয়েছেন, চাকরিচ্যুত কর্মীদের বিষয়ে এইচএসবিসির নীতিমালা ও মূল্যবোধ অনুযায়ী স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তবে কি পরিমান কর্মীকে ছাটাই করা হচ্ছে, তাদের কি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছে এইচএসবিসি কর্তৃপক্ষ।

প্রকাশক : সৈয়দ মাহমুদ মূসা

অফিস এড্রেস :3/1 , Block F , Lalmatia, Dhaka

+8801779338880‬

info@studentbd24.news (সাধারণ তথ্যের জন্য), editor@studentbd24.news (সম্পাদকীয়),

প্রিন্ট করুন