বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫ ২৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইমামের উদ্যোগে নাইজেরিয়ায় নারীদের জন্য প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়

ডেস্ক রিপোর্ট।।
ডেস্ক রিপোর্ট।।
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ৩:৫১ পিএম
ইমামের উদ্যোগে নাইজেরিয়ায় নারীদের জন্য প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়

তাজকিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। নাইজেরিয়ার ইতিহাসে প্রথম নারী বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু তাই নয়, এটি নাইজেরিয়ায় নারীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রথম ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘সচ্চরিত্রের সঙ্গে শিক্ষা।’

সম্প্রতি দেশটির ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিজ কমিশন (এনইউসি) তাজকিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুমোদন দিয়েছে। আরও আটটি নতুন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অনুমোদন পেয়েছে তাজকিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষামন্ত্রী ড. তুনজি আলাউসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন লাভের ঘোষণা দেন।

Article large 1

নাইজেরিয়ার কাদুনা রাজ্যের জারিয়ায় স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য হলো, যেসব নারী ইসলামি শিক্ষা গ্রহণ করতে আগ্রহী তাদের নিরাপদ ও ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা।

নাইজেরিয়ার বিখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও আবুজা জাতীয় মসজিদের উপ-প্রধান ইমাম অধ্যাপক শেখ ইবরাহিম আহমদ মাকারির উদ্যোগে এই নারী ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাজকিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু নারী শিক্ষার্থীরাই ভর্তির সুযোগ পাবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পর্যায়ে শুধু নারীদেরই নিয়োগ দেওয়া হবে। নাইজেরিয়ার ইতিহাসে যা এক অভূতপূর্ব ঘটনা। তাজকিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন করা হবে কাদুনা মহানগরীতে।

তবে আপাতত জারিয়ায় অস্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন করে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। তারা দ্রুততম সময়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে চায়। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত একটি ভর্তি বিজ্ঞপ্তি থেকে দেখা যাচ্ছে, তাজকিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তিনটি অনুষদের ১৫টি বিভাগে ভর্তির আহবান জানিয়েছে। তা হলো- ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স অনুষদের বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, অ্যাকাউন্টিং, ট্যাক্সাশন, ইকোনমিকস ও ক্রিমিনোলজি; অ্যালাইড হেলথ সায়েন্স অনুষদের মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি সায়েন্স, নার্সিং, হিউম্যান নিউট্রেশন অ্যান্ড ডায়েটিকস, পাবলিক হেলথ ও হেলথ ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট এবং সায়েন্স অ্যান্ড কম্পিউটিং অনুষদের কম্পিউটার সায়েন্স, সাইবার সিকিউরিটি, সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং, পেট্রোলিয়াম কেমিস্ট্রি ও ইনফরমেশন টেকনোলজি।

Article large 2

অধ্যাপক মাকারি তার ফেসবুক পেজে ঘোষণা করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় একই সঙ্গে উন্নত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক উন্নয়নকেও গুরুত্ব দেবে, যেন সমাজে সত্যিকার পরিবর্তন আসে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় কোনো ব্যক্তির পকেটে ঢুকবে না, বরং এতিমদের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্টে হস্তান্তর করা হবে। এই ট্রাস্ট আল্লাহর পক্ষ থেকে পবিত্র আমানতস্বরূপ। এর কাজ হবে জ্ঞানে সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন এবং অভিভাবকহীন শিশুদের ভবিষ্যতের সুরক্ষা দেওয়া। নাইজেরিয়ান মুসলমানদের কাছে তাজকিয়া বিশ্ববিদ্যালয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনেক বেশি কিছু। কেননা যেখানে নারীরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে প্রায় প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়, সেখানে নারীদের স্বতন্ত্র্য ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় অনেকের কল্পনার অতীত।

নাইজেরিয়ার শিক্ষাবিদ ড. আমিনা লাওয়াল বলেন, নাইজেরিয়ায় একটি স্বতন্ত্র্য নারী বিশ্ববিদ্যালয় কোনো প্রতীকী বিষয় নয়, এটি একটি বৈপ্লবিক বিষয়। এটি প্রমাণ করে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় সম্ভব।

নাইজেরিয়ার ধর্মীয় নেতারাও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। দেশটির অন্যতম প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা এবং তিজানিয়া সুফি ধারার প্রধান পীর শায়খ আমিনুল্লাহ আকোশিলি তাজকিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করায় শেখ ইবরাহিম আহমদ মাকারির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

Article large 3

তিনি এক বক্তৃতায় বলেছেন, এই যুগান্তকারী উদ্যোগটি শুধু একটি শিক্ষাগত অর্জন নয়, বরং তা আল্লাহর অনুগ্রহও বটে। এতে শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে। আধ্যাপক মাকারির এই উদ্যোগে ইসলামের প্রকৃত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন রয়েছে, যা জ্ঞান, ক্ষমতায়ন ও নারীর মর্যাদাকে উৎসাহিত করে।

বহু নাইজেরিয়ান বিশ্বাস করে, তাজকিয়া বিশ্ববিদ্যালয় নাইজেরিয়ার উচ্চশিক্ষার ইতিহাসে শুধু নতুন সংযোজন নয়, বরং তা অধ্যাপক মাকারির দীর্ঘ জীবনের জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বিশ্বাস, নিষ্ঠা ও কর্মতৎপরতার প্রতিফলন। ইমাম মাকারি ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ নাইজেরিয়ার কাতসিনা রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি মিসরে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৫ সালে জারিয়ার আহমাদু বেল্লো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং ২০০৯ সালে কানোর বায়েরো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

২০১০ সালে তিনি কাদুনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০১২ সালে তিনি আবুজা জাতীয় মসজিদের উপ-প্রধান ইমাম পদে নিয়োগ পান। তিনি নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজায় ‘তাজকিয়া এডুকেশন রিসোর্স সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা সারা দেশে ৩০টিরও বেশি কোরআনিক ও ইসলামিক স্কুল পরিচালনা করে। এ ছাড়া তিনি অ্যাসেম্বলি অব মুসলিমস ইন নাইজেরিয়া, দ্য সুপ্রিম কাউন্সিল ফর ইসলামিক অ্যাফেয়ারস, এডিটরিয়াল বোর্ডস অব একাডেমিক জার্নালস। তার লিখিত বইয়ের সংখ্যা ২০-এর অধিক।

Loading...
×