বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫ ২৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পি-আর পদ্ধতি। বিরোধিতা এবং পক্ষপাতিত্ব।

ডেস্ক রিপোর্ট।।
ডেস্ক রিপোর্ট।।
প্রকাশিত: শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫, ৮:০৩ পিএম
পি-আর পদ্ধতি। বিরোধিতা এবং পক্ষপাতিত্ব।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহলে সবচেয়ে আলোচিত যে বিষয় তা হলো পি-আর পদ্ধতি। রাজনৈতিক দলগুলোর মাঠ পর্যায়ের সমর্থক থেকে শুরু করে দেশের জনগন উভয়ই জাতীয় নির্বাচনে পি-আর পদ্ধতি নিয়ে বেশ অজ্ঞ।


Article large 1

পি-আর পদ্ধতি নিয়ে সিদ্ধান্তের কথা বললে শুধু নিজেদের দল বা সমর্থন করা দলের সিদ্ধান্তই তারা জানিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে দেশের যেসকল দলগুলো ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পি-আর পদ্ধতি চায়, দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তারা পি-আর কি?, কেন তারা পি-আর চায়? এবং পি-আর হলে কি কি হবে তা ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছে। অনুরূপ ভাবে যারা পি-আর চায় না তারাও পি-আর কি, কেন তারা পি-আর চায় না? এবং পি-আর না হলে কি কি হবে তা ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

দেশের জনগণকে আগে বোঝাতে হবে পি-আর পদ্ধতিটা আসলে কি? এরপর জনগন সিদ্ধান্ত নিবে যে তারা পি-আর চায় নাকি চায় না। বাংলাদেশে বর্তমানে একক-সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পদ্ধতি (এফপিটিপি) নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু আছে। সে আলাপে আরেকদিন যাবো। পি-আর পদ্ধতি হলো এমন একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা যেখানে একটি রাজনৈতিক দল মূল ভোটার সংখ্যার যত শতাংশ ভোট পাবে ঠিক তত শতাংশ আসন তারা জাতীয় সংসদে পাবে। সহজ ভাষায় বললে ধরা যাক বাংলাদেশে তিনটি দল আছে “এক্স”, “ওয়াই” এবং “জেড”। জাতীয় সংসদে আসন রয়েছে ৩০০ টি। এখন জাতীয় নির্বাচনে ধরে নিলাম এক্স পার্টি সাড়ে ৫ লক্ষ ভোট পেলো। অর্থাৎ মূল ভোটার সংখ্যার মধ্য সাড়ে ৫ লক্ষ । মনে করি, মূল ভোটার সংখ্যা ১০ লক্ষ। তাহলে এক্স পার্টি ভোট পাবে ৫,৫০,০০০÷১০,০০,০০০×১০০=৫৫%। জাতীয় সংসদে আসন রয়েছে ৩০০ টি। তাহলে তারা জাতীয় সংসদে আসন পাবে ৫৫%×৩০০=১৬৫ টি। তদনুরূপ ওয়াই পার্টি যদি ৩ লক্ষ ভোট পায় তাহলে তারা পাবে ৩,০০,০০০÷১০,০০,০০০×১০০=৩০%, তারা জাতীয় সংসদে আসন পাবে ৩০%×৩০০=৯০ টি এবং জেড পার্টি যদি দেড় লক্ষ ভোট পায় তাহলে তারা পাবে ১,৫০,০০০÷১০,০০,০০০×১০০=১৫% ভোট এবং জাতীয় সংসদে তারা আসন পাবে ১৫%×৩০০=৪৫ টি। পি-আর পদ্ধতি অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলো যে যত শতাংশ ভোট পেলো ঠিক তত শতাংশ আসন তারা সংসদে পাবে।

পি-আর পদ্ধতির সবচেয়ে ভয়ানক দিক হলো জাতীয় সংসদে যারা জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করবে তারা কেউই জনগনের দ্বারা নির্বাচিত হবে না। কারণ জনগন ভোট দিবে মার্কাকে বা রাজনৈতিক দলকে এবং রাজনৈতিক দল সিলেক্ট বা নিশ্চিত করবে কোন  আসনে কোন  ব্যক্তি সংসদ সদস্য হিসেবে কাজ করবে। সেক্ষেত্রে আপনার আসনের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাকে আপনি সংসদ সদস্য হিসেবে নাও পেতে পারেন। এমনকি আপনি এমন কাউকেও সংসদ সদস্য হিসেবে পেয়ে যেতে পারেন যিনি আপনার আসনের ভোটার তো দূরের কথা তিনি আপনার আসনের নাগরিকই নন। একটি আসনের সকল সমস্যা এবং সেই আসনের জনগনের সাথে সম্পৃক্ততা শুধুমাত্র সেখানকার বসবাসরত একজনের মাধ্যমেই সম্ভব। যিনি আপনার এলাকার না, আপনার এলাকায় কখনো আসেননি, আপনাদের সাথে দুটি কথা বলেননি তাকে কি আপনি আপনার আসনের সংসদ সদস্য বা জাতীয় সংসদে আপনার প্রতিনিধি হিসেবে মেনে নিতে পারবেন? এর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো যদি কোনো আসনে অরাজনৈতিক কোনো ব্যক্তিকে জায়গা দিয়ে দেয় তাহলে সে আসনের জনগনের সমস্যা সমাধান কোনো দিনও সম্ভব হবে না

Article large 2

পি-আর পদ্ধতির কিছু ভালো দিকও রয়েছে। যেমন এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ভোটের অপচয় কম হয়, ছোট দলগুলোর সুযোগ বাড়ে, সংসদের আসন বণ্টনে দলের জনপ্রিয়তা সংসদের আসন সংখ্যার মাধ্যমে স্পষ্ট দেখা যায়।

কিন্তু এই ভালো দিকগুলো পি-আর পদ্ধতির একটি খারাপ বৈশিষ্ট্যের কাছেই হেরে যাচ্ছে। যা হলো নিজেদের আসনের প্রতিনিধিকে নিজেরা নির্বাচিত করতে না পারা।

পি-আর পদ্ধতি নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রথম দিন থেকেই বিরোধিতা করে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি), পি-আর পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে থেকেছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) প্রতিটি সংসদীয় আসনে জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধির থেকে নিজেদের দলের পক্ষে সংসদে বেশি আসন পাওয়াকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।

পরিশেষে বলতে চাই, আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত ছিলো প্রথম দিন থেকেই বাংলাদেশের খেটে খাওয়া এবং অজপাড়া গাঁয়ের মানুষদের বোঝানো যে পি-আর পদ্ধতি কি এবং তাদের দল কেনো পি-আর পদ্ধতির পক্ষে বা বিপক্ষে। দীর্ঘ ১৭ বছর পর জনগণ একটি সুন্দর, সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন পেতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পারবে সেই আশা ব্যাক্ত করে আজকের এই আলোচনার এখানেই ইতি টানছি।

Article large 3

-     জান্নতুল নাঈম অর্ণব,তরুণ রাজনীতিবিদ 

Loading...
×